১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি, তখন জানুয়ারি মাস মানেই হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা। সকাল ১০টা বেজে ১৮ মিনিটে ভারতকে ‘সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করলেন দেশের শেষ গভর্নর চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী৷ এর দু’দিন আগেই ডক্টর রাজেন্দ্রপ্রসাদ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ডক্টর রাজেন্দ্রপ্রসাদ তাঁর বক্তৃতায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, জাতির জনক এবং অসংখ্য মানুষ যাঁরা স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানালেন৷ দরবার হল এখনকার রাষ্ট্রপতি ভবনে তখন বরেণ্য দেশনায়কদের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ সস্ত্রীক হাজির৷ সেইসঙ্গে উপস্থিত ক্যাবিনেট মন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, দেশের অডিটর জেনারেল-সহ বিশিষ্ট নাগরিক।
ডক্টর রাজেন্দ্রপ্রসাদ প্রথমে হিন্দিতে তারপর ভাষণ দিলেন ইংরেজিতে। জওহরলাল নেহেরু উঠে দাঁড়িয়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে করমর্দন করলেন। দু’জনে একসঙ্গে অভিনন্দিত জানালেন রাষ্ট্রপতিকে। ততক্ষণে অশোকস্তম্ভস্থাপন করা হয়েছে ভূতপূর্ব ব্রিটিশ ভাইসরয়ের সিংহাসনের পাশে। পিছনে বুদ্ধের মূর্তি। এইদিন ভারতীয় হাই-কমিশনার ভিকে কৃষ্ণ মেনন, লন্ডনে বসবাসকারী ভারতীয় কর্মী, ছাত্র-ছাত্রী এবং আন্দোলনকারীদের সামনে ‘সার্বভৌম’, ‘গণতান্ত্রিক’ দেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন ভারতবর্ষের নাম৷
ভারতীয় হাই কমিশনার মেনন শপথ নিয়ে বলেন, “পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে বসবাসরত সব ভারতীয় নাগরিক আজ থেকে প্রজাতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পেলেন। সেই সঙ্গে তাঁদের স্বাধীন মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার ছাড়পত্র মিলে গেল। ইতিহাস এই দিনটিকে মনে রাখবে।”
গান্ধিভক্ত তাই নেতাজি নিজের বইয়ের ভূমিকা লিখতে দিতে চান নি রবীন্দ্রনাথকে
প্রায় পনেরো হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিলেন সেই ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারির সকালে। দরবার হল থেকে, রাষ্ট্রপতি, ছ’টি অস্ট্রেলিয়ান ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে , সহযাত্রী প্রেসিডেন্ট সুকর্ণকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা করলেন৷ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব। পথের দু’পাশে পতাকা হাতে হাজার-হাজার মানুষ ভিড়ে সামিল। কেবল পথের দু’পাশে নয়, আশপাশের গাছ ও বাড়ির ছাদও লোকে-লোকারণ্য। রাজেন্দ্রপ্রসাদ হাতজোড় করে, স্মিতহাস্যে স্বাগত জানাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতিকে ৩১ বার গান স্যালুট দিয়ে বরণ করে নেওয়া হল। রাষ্ট্রপতি জিপে করে প্রদক্ষিণ করলেন পুরো অ্যাম্ফিথিয়েটার। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন।
১৯৪৭-৪৮ সালে, কাশ্মীর যুদ্ধের সাহসিকতার সঙ্গে তাদের অবদানের জন্য চার জনকে ভারতের সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মান ‘পরমবীর চক্র’ প্রদান করা হয়। নেহরুকে বেশ খানিকক্ষণ উপস্থিত জনতার সঙ্গে আলাপচারিতার মগ্ন দেখা যায়।
দেশের অনেক জায়গায়, মানুষ জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে পথ-পরিক্রমা শুরু করেছিলেন সূর্যোদয়ের আগে থেকেই। একদিনের বদলে দু’দিনের জাতীয় ছুটির ঘোষণা করা হয়। বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জাতীয় তথা দেশীয় উৎসব ছিল ১৯৫০ সালের ২৬জানুয়ারি। ভারতবর্ষের সার্বভৌম গণতন্ত্রের জন্মদিন।