পরিবারে কেউ কখনো গান করেনি৷ ছেলে যাতে মন দিয়ে পড়াশুনা করে তাই টিভির কানেকশন পর্যন্ত রাখা হয়নি৷ তারপরেও সেই ছেলে লিখল এমন যা তা গান! ভাবা যায়!
এস পি সুদীপ কে মানুষ কীভাবে চিনছে ?
২০১৫ সালে আমার প্রথম পরিচিতি ফেক লাভ দিয়ে৷ ভালোবাসা মানে মেয়েদের কাছে সেক্স ছেলেদের কাছে টাকা। সেটা টেকনিকাল কিছু কারণে আপাতত না থাকলেও পরে আবার ফিরিয়ে আনব৷ এই গানে প্রায় ১ মিলিয়ন ভিউ হয়েছিল৷ লজ্জিত বাঙালি একটি পলিটিকাল ট্র্যাক ছিল৷ সদ্য ভাইরাল হয়েছে টুম্পা, কনফিউস পিকচারস এর, আমার গানটাও কনফিউস পিকচারস এর ছিল। যেহেতু এটা আমার নিজের ইউটিউব চ্যানেল তাই এবার প্রতি মাসে নতুন কিছু আসবে৷
আপনার ব্যান্ড ফিভারের কম্পিটিশনে সেকেন্ড হয়েছিল, ব্যান্ড এর নাম কী?
কলকাতা সিটি গ্যাংসট্রেস (KCG)
২০১৫ ফেক লাভ যখন লঞ্চ হয় তখনই আমরা নিজেরা একটা ব্যাণ্ড করেছিলাম৷ ফিভার এফ এম আমাদের একটা পরিচিতি দিয়েছিল৷ ফিভার এর কম্পিটিশনে ফার্স্ট রানার আপ হই৷ এরপর ২০১৮ সালে আমরা ব্যান্ড হিসেবে না থেকে প্রত্যেকে নিজেরা কাজ করা শুরু করলাম। বাম্পি দা ক্যাকটাসের বেসিস্ট ছিল। তার সঙ্গে একটা অ্যালবামে কাজ করলাম৷ তারপর দেভ অ্যান্ড থিম করলাম৷ স্যাভি দার সঙ্গে । ফিভার এর সঙ্গে দুবার দুর্গাপুজোর গানে কাজ করেছিলাম। অ্যাথলেটিক ও ডি কলকাতার কাজ করেছি৷ এখন একেবারেই নিজের মত কাজ করছি৷ এখন নিজের মত রক, র্যাপ কে নিয়ে নতুন ট্যালেন্ট এর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে৷
শুরুটা কীভাবে হল?
বিগত সাত বছর ধরে গান করছি৷ পরিবারে গানের চর্চা ছিল না। সারা সপ্তাহ পড়াশুনা শেষে একটা করে সিডি পেতাম ইংলিশ মুভি’র৷ সেই গানগুলো শুনতাম৷ মনে হত কীভাবে হয়েছে গানগুলো? এগুলো মনে হত ইউনিক কিছু করব৷ অন্যরকম কিছু মানুষের কাছে তুলে ধরব৷ হিপ হপ র্যাপ শুনতে শুনতে মনে হল এই ফর্ম টাকে যদি বাংলায় করা যায়৷ তখন ওটা নিয়ে আরও শুনলাম তারপর নিজের মত করে। সেভাবেই শুরুটা হল
যাতা কতটা যা তা?
যা তা আসলে আমার নিজের লেখা। সত্যি বলতে তখন আমি নিজেও একটু ছ্যাঁকা খেয়েছিলাম এবং সেটা সরস্বতী পুজোর বিকেল ছিল। সেই মনখারাপ সেই আবেগটাকে মনে হল গানের ক্ষেত্রে কাজে লাগাই৷ আমার অনেক কাজের সঙ্গেই আমার নিজের মিল রয়েছে৷ যাতা র্যাপ নয়৷ এটা রেগে৷ আমার যতটুকু জানা তাতে বাংলায় প্রথম র্যেগে হিপহপ হচ্ছে যা তা৷ একটু নতুন এক্সপেরিমেন্ট করেছি বাকিটা মানুষ বলবেন৷
এই সময় সম্পর্ক এত তাড়াতাড়ি ভাঙছে কেন?
কথা বলতে বলতে কথা ফুরিয়ে যায়৷ যখন আর নতুন কিছু বলার থাকে না তখন আমরা কী করি নিজেদের অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করি৷ তবে সব মানুষ সমান নয়৷ যেমন ফেক লাভ শুনে অনেকের মনে হয়েছিল আমি মেয়েদের বিপক্ষে৷ কিন্তু লাইভ স্টেজে যখন করছি তখন এমনও হয়েছে মেয়েরাই স্টেজে এসে মাইক্রোফোন নিয়ে গেয়েছে।
কথা ফুরিয়ে যাচ্ছে কেন? এত সব কিছু হাতের মুঠোয় তাই?
সেটা কিছুটা৷ টেকনোলজি যেমন অনেক ভালো কিছু দিয়েছে তেমনি আবার আগে কী হত আমাদের বাবা মা’দের সময় তারা একটা চিঠির উত্তর কখন আসবে তার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকত৷ এখন মিনিটে মিনিটে বাবু খেয়েছ?
গানের মধ্যে কিছু শব্দ ইঙ্গিত একটু হলেও বিতর্কিত৷ এটা করার কোনো বিশেষ কারণ আছে?
র্যাপ মানে আমার কাছে বাস্তবকে তুলে ধরা৷ বাস্তবের আয়নায় আমার গান শুনে যদি দুটো মানুষ মোটিভেট হয় সেটাই আমার প্রাপ্তি৷ যা তা দিয়ে আমি এটাই বোঝাতে চেয়েছি ব্রেকাপ মানে সব শেষ নয়৷ আমার লাইফে একজন চলে গেল বা ছেড়ে গেল মানে জীবন শেষ তাও নয়৷ তারপরেও অনেক কিছু আছে৷ ব্রেকাপ মানুষকে যেমন একদিকে ভেঙে দেয় তেমন আবার অন্যদিকে গড়েও দেয়৷ আমি চাই এই গান টা শুনে যেন ১০ টা ছেলে চোখের জল মুছে সুইসাইড করার পরিবর্তে নতুন করে উঠে দাঁড়আনোর শক্তি পায়৷
আপনার শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
একজন শিল্পী বেঁচে থাকেন তার শ্রোতাদের জন্য৷ বাবা মা’র প্রতি যে ভালোবাসা আছে তেমনি আমি আমার প্রতিটি দর্শক শ্রোতাকে ভালোবাসি৷
নতুনদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
দেখুন যে জায়গা থেকে আমি শুরু করেছিলাম তখন র্যাপ কী জিনিস মানুষ সেভাবেও জানত না। আমার পাশের বাড়ির দাদা এসে বলেছিল আজ কোন স্টেজে রেপ আছে৷ কিন্তু আমি এখন গর্বিত যে আমার এলাকায় আরও ১০ টা ছেলে র্যাপার হতে চাইছে৷ আমাকে জানতে চাইছে দাদা কীভাবে এগোব? এটা সত্যি ভালোলাগার৷ নতুনদের এটাই বলব যে লেগে থাকো, যা করতে চাইছ সেটাই করো। আমরা তো নিজেরা কাজ করি৷ এভাবেই যদি আপনাদের মত আরও অনেকে নতুন গান নতুন ট্যালেন্টকে সুযোগ দেয় তাহলে বাংলা ইন্ডিপিডেন্ট মিউজিক আরও অনেকটা এগোতে পারবে৷ কারণ একটা গান খেটে তৈরি করার পর আবার পকেট থেকে খরচা করে আলাদা করে প্রোমোশন করা সবসময় সম্ভব হয় না৷ রেডিও টিভি সব জায়গায় ফিল্মি মিউজিকের জায়গা বেশি৷ তাই শুধু রক বা র্যাপ নয়, সামগ্রিক ভাবেই বাংলা ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিকের পাশে থাকুন৷